দেবদেবীর অভিশাপে আমি অভিশপ্ত। অভিশপ্ত জীবনটা বড় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাই আমাকে লোহার খাঁচায় ঢুকতে হয়েছে। অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে লোহার খাঁচায় ঢুকতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
লোহার খাঁচায় ঢুকতে হয়েছে দেবদেবীর অভিশাপে অভিশপ্ত, তাই : ড. ইউনূস
রোববার (২ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ সৈয়দ আরাফাত হোসেনের আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের চার্জগঠনের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত আগামী ১২ জুন আদেশের জন্য রেখেছেন।
মামলার শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে উপরোক্ত মন্তব্য করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা যে লোহার খাঁচার মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম আদালতের কাঠগড়ায়। এটা অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ। আমরা নোবেল পুরস্কারের কথা সবাই জানি। দুইটা নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। একটা ছিল আমার নামে, আরেকটা গ্রামীণ ব্যাংকের নামে। দুইটারই সমান গুরুত্ব ও মর্যাদা। কোনটার চেয়ে কোনটা কম নয়। এটা যৌথভাবে দেওয়া হয়েছে, তাও না। দুইটাই স্বাধীনভাবে দেওয়া হয়েছে।
এ নোবেলজয়ী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে কোনও নজীর নাই, একজন নোবেল বিজয়ী আরেকজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে মামলা করতে দুদকে হাজির হয়েছে। এটা আমাদের কপালে হলো। এটা অভিশাপের একটা অংশ। যে অভিশাপ আমরা গ্রহণ করে যাচ্ছি। সে অভিশাপ এমনভাবে হয়েছে, একটা নোবেল বিজয়ী এবং এ নোবেল বিজয়ী হলো খুবই সম্পৃক্ত নোবেল বিজয়ী। অনেকটা পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মত নোবেল বিজয়ী। যে আমার কারণে এটা সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। সেটাও আমার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পেয়েছে। এটারই একটা অংশ। যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে দুজনের মধ্যে একজন। এটা আমার বিরুদ্ধে এমনভাবে নিয়ে আসলো খুব কঠিন ভাষায়, রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করে।
তিনি বলেন, অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করে অভিযোগগুলো করে। যে অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে আপনাদের জানিয়েছি ঘটনা কী ঘটেছিল। এ ঘটনার মধ্যে কোনও সত্যতা তো নেই। যে জিনিস দিয়ে দিয়েছিলাম সেটার জন্য আমাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, টাকা মেরে দিয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি। এ পর্যন্ত যত অভিযোগ এসেছে আমার ও সহকর্মীদের বিরুদ্ধে, তারা অভিশাপের একটা অংশ। এটা আমার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। যে আমার বাবাকে আক্রমণ করেছে, ভাই-বোনদের আক্রমণ করেছে। এই যে সেটা অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ বলে গেলাম।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ সময় কেন তাদের অভিশপ্ত জীবন বহন করতে হচ্ছে সেটা আপনারা জানুন এবং লিখুন। শুধু জানা নয়, কিছু লিখুন। সত্যতা, গুরুত্বটা, ভূমিকাটা কী? রিপোর্টিং বলতে শুধু শুনলাম, লিখলাম এটা না। এর একটা ব্যাখ্যাও আছে। গভীরে যাওয়া, সবাইকে জানান দেওয়া সেটাও একটা অংশ।
এর আগে, এদিন মামলায় হাজিরা দিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতে আসেন ড. ইউনূস। অন্যান্য আসামিরাও আদালতে হাজির হন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে মামলার শুনানি শুরু হয়। এর আগেই, অন্য মামলার শুনানি চলছিল। মামলার শুনানির শুরুতে আদালতে বেঞ্চে বসেছিলেন ড. ইউনূস। এ সময় আসামিদের নাম ডাকা হয়। অন্যান্য আসামিরা ডকে প্রবেশ করতে থাকেন। ড. ইউনূসের নামও ডাকা হয়। আইনজীবীরা তাকে বেঞ্চে বসে থাকতে বলেন। তখন তিনি বলেন, আমার সহকর্মীরা ডকে ঢুকেছেন, আমিও যাব। পরে তিনি আসামিদের জন্য তৈরি লোহার খাঁচায় প্রবেশ করেন। ১০ মিনিট থাকার পর বিচারক তাদের বেঞ্চে বসার অনুমতি দেন। পরে সব আসামিরা সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।