বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর রিমান্ড আবেদনে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযোগ করেছে, তার বক্তব্যে উত্তেজিত হয়ে জনতা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরসহ নাশকতা করেছে। তবে, দুদুর আইনজীবীরা বলেছেন, সেদিন দুদু মঞ্চে বক্তৃতা দেননি। তাহলে কেন তিনি এ মামলার আসামি হবেন? আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পাল্টা অভিযোগ করেছেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা শোডাউনের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছেন। সোমবার (৬ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এ অভিযোগ করেন শামসুজ্জামান দুদুর আইনজীবীরা। এদিন শামসুজ্জামান দুদুকে আদালতে হাজির করে রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) রফিকুল ইসলাম। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, এটি নাশকতার মামলা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, এ দ্বারা কী বোঝা যায়? তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা জাহাঙ্গীরের শোডাউন থেকে , অভিযোগ দুদুর আইনজীবীর
দুদুর পক্ষে মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মহসিন মিয়া, ওমর ফারুক ফারুকী ও সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
মাসুদ তালুকদার বলেন, তিনি ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। সংসদ সদস্য হয়েছেন। অত্যন্ত ভদ্র একজন মানুষ। তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে পারেনি যে, তিনি রূঢ় আচরণ করেছেন। আজ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালানোর। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। শামসুজ্জামান দুদু ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগী। অবস্থা এমন, যেকোনো সময় একটা অঘটন ঘটতে পারে। বয়স, ভালো মানসিকতা, অসুস্থতা বিবেচনা করে জামিন দিন।
ওমর ফারুক বলেন, মহাসমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই সাউন্ড গ্রেনেড হামলা শুরু। ২টায় মহাসমাবেশ শুরুর আগেই রাস্তা ফাঁকা। পুলিশ বুলেট-বোমা মেরে, মানুষ হত্যা করে রাস্তা ফাঁকা করে দিলো। মিটিং শুরুই তো করা যায়নি। তাহলে, উনি বক্তব্য দিলেন কখন? এ ঘটনায় প্রধান বিচারপতি আজ পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দিলেন না। আওয়ামী লীগের লোকজন পতাকাসম্বলিত লাঠি নিয়ে এসে সমাবেশে হামলা করে। আমাদের লোকজন বেশি ছিল। এ কারণে তারা প্রধান বিচারপতির বাসার গেট ভেঙে ঢুকে হামলা করে। পুলিশ তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। প্রধান বিচারপতির বাড়িকে আর কত ব্যবহার করবেন চলমান আন্দোলন দমানোর জন্য।
মহসিন মিয়া বলেন, সমাবেশ শুরুর আগে সাউন্ড গ্রেনেড হামলা। আর বলা হচ্ছে, দোকানে আগুন দেয়া হয়েছে। সেখানে তো কোনো দোকান নেই। ফলস ফেব্রিকেটেড। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। এখন তো প্রযুক্তি অনেক উন্নত। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যাবে, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মিথ্যার একটা সীমা থাকে। এটা সীমাহীন মিথ্যা। বহিষ্কৃত নেতা জাহাঙ্গীরের শোডাউনের লোকজন প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।
এসব বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আওয়ামী লীগের কি ঠেকা পড়েছে? দেশের জনগণ দেখেছে, কারা হামলা চালিয়েছে?
প্রধান বিচারপতি বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা মানায়? উনি তো একটা প্রতিষ্ঠান। আর সিসি ক্যামেরা তারা কেটে ফেলেছে।
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, শামসুজ্জামান দুদু কিছু বলতে চান।
আদালত তাকে বলার অনুমতি দেন। পরে শামসুজ্জামান দুদু আদালতে বক্তব্য দেন।
এর পর আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।