হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়ার অনেক কারন রয়েছে যখন খাবার অথবা ব্যায়ামে কোনো পরিবর্তন ঘটানো হয়নি। তাই হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি পেলে সচেতন হতে হবে এবং জানতে হবে ঠিক কি কারনে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওজন বৃদ্ধির স্পষ্ট কারন স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক ক্যালরি গ্রহন করা অথবা শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেওয়া। খাবার ও ব্যায়াম সব সময়ের মত এক হওয়ার পরেও কিছু মানুষের ওজন বৃদ্ধি পায়। আর এই সময়েই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কেন এমনটা হচ্ছে তা জানার জন্য এবং এর প্রতিকার কি তা মানার জন্য। পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম না হওয়া: যদি কেউ রাতে ঠিকভাবে না ঘুমায় তাহলে গভির রাতের ¯œ্যাকিং এ লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া ওজনের পরিমান বৃদ্ধি পেলেও পর্যাপ্ত ঘুম না হতে পারে। ঘুম থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনে শরীরে জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন যে কোনো মানুষকে ক্ষুধার্ত করে তুলতে পারে। এছাড়া খাওয়ার পরেও কম খাওয়ার অনুভূতি হবে। মানসিক চাপ: আমরা যখন মানসিক চাপে থাকি তখন ষ্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের পরিমান বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন আমাদের ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। মানসিক চাপের সময় আরামদায়ক খাবারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। ফলে ওজন বৃদ্ধির সুযোগ থেকে যায়।
ওজন বৃদ্ধির সারপ্রাইজিং কারণ
বিষন্নতা নাশক ঔষধ: অনেক বিষন্নতা নাশক ঔষধের পাশর্^ প্রতিক্রিয়া ওজন বৃদ্ধি করে। ওজন বৃদ্ধি যদি সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ঔষধ বন্ধ না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু মানুষের ওজন বৃদ্ধি পায় যখন ঔষধের চিকিৎসায় কাজ হচ্ছে। কারন তখন সে সব রোগীরা ভালো অনুভব করে এবং ক্ষুধা বেশি থাকে বা খাবার ইচ্ছা থাকে। হতাসা বা ডিপ্রেশন নিজ থেকে ওজনের তারতম্য ঘটাতে পারে।
ষ্টেরয়েড: ষ্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ যেমন: প্রেডনিসোলন সেবন করলেও জনবৃদ্ধি পায়। কারন ষ্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের ফলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্লুইড জমা হয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। ওজন বৃদ্ধির পরিমান নির্ভর করে ড্রাগ বা ঔষধের ডোজ এবং ঔষধ সেবনের সময় কালের উপর। ষ্টেরয়েড সাময়িক পরিবর্তন ঘটাতে পারে শরীরে ফ্যাট বিতরনের ক্ষেত্রে। সাধারনত এ সময় মুখ, ঘাড়ের পিছনে অথবা পেটে অধিক চর্বি জমা হতে পারে।
ঔষধ ওজন বৃদ্ধি করে থাকে: এন্টিসাইকোটিক ড্রাগ যেমন- সিজোফ্রেনিয়া অথবা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের ঔষধ ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া খিঁচুনি, মাইগ্রেন, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঔষধও ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। যদি আপনার ওজন বৃদ্ধি পায় তাহলে এক্ষেত্রে ঔষধ বন্ধ না করে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ঔষধ সেবন করবেন, যেসব ঔষধের পাশর্^ প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক ভাবে কম।
জন্ম নিরোধক পিল: অনেক মহিলারা বিশ^াস করেন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ওজন বৃদ্ধি করে। যাই হোক এক্ষেত্রে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই। জন্মনিরোধক পিল সেবন করার সময় কিছু মহিলার সামান্য ফ্লুইড জমা হতে পারে। কিন্তু এটি সাময়িক।
হাইপো থাইরয়ডিজম: কম কার্যকর থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের লক্ষন ক্লান্তি, ঠান্ডা অনুভূত হওয়া এবং ওজন বৃদ্ধি পাওয়া। হাইপোথাইরয়ডিজমে থাইরয়েড হরমোনের পরিমান কমে যায়। হাইপোথাইরয়ডিজম আপনার মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং এর ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। ঔষধ দিয়ে হাইপোথাইরয়ডিজম চিকিৎসা করা যায়।
মেনোপজের কারনে ওজন বৃদ্ধি: মেনোপজের সময় অধিকাংশ মহিলাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ওজন বৃদ্ধি পায় যদি খাবার অভ্যাস আগের মতই থাকে। লাইফ স্টাইলের পরিবর্তন ও ব্যায়াম এক্ষেত্রে ভাল ভূমিকা রাখে। মেনোপজ শরীরে ফ্যাট জমা হওয়ার স্থানকেও প্রভাবিত করতে পারে। দেখা যায় কোমরের চারপাশে ফ্যাট জমা হতে থাকে মেনোপজের পর।
কুশিং সিনড্রোম: কুশিং সিনড্রোম এমন একটি অচলাবস্থা যখন আপনার শরীর লম্বা সময়ের জন্য অতিরিক্ত কর্টিসল হরমোন তৈরি করে। তাই কুশিং সিনড্রোমে কর্টিসল হরমোনের পরিমান বেড়ে যায়। এছাড়া অ্যাজমা, লুপাস অথবা আর্থাইটিসের ক্ষেত্রে যদি লম্বা সময় ধওে ষ্টেরয়েড ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তাহলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। অতিরিক্ত কর্টিসল ওজন বৃদ্ধি করে এবং মুখ, ঘাড়, কোমর এবং পিঠের উপরিভাগে ফ্যাট এর পরিমান বৃদ্ধি করে থাকে।
পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম: পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম হলো মহিলাদের মধ্যে অ্যান্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে কিছু উপসর্গের সমাহার। এটি একটি হরমোন জনিত ব্যাধি। যখন মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন ডিম্বাষয়ের আশে-পাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়যার ফলে অতিরিক্ত লোম, ব্রন, এবং ইনসুলিন রেজিষ্ট্যান্স এর সৃষ্টি হয় যা ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে ওজন বৃদ্ধি পায় পেটের পাশে। যার ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকিবৃদ্ধি পায়।
ধুমপান ত্যাগ: মানুষের মধ্যে যারা ধুমপান ত্যাগ করেন তাদের সামান্য ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। অধিকাংশ মানুষ যারা ধুমপান ত্যাগ করেন তাদের কম-বেশি ১০ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি পায়। নিকোটিন ছাড়া আপনি ক্ষুধার্ত অনুভব করতে পারেন যদিও এই অনুভূতি কয়েক সপ্তাহ পরে চলে যায়। আপনার বিপাক ক্রিয়া কমে যেতে পারে। অধিক খাবার খেতে ইচ্ছা করবে, খাবার খাওয়ার সময় বেশী স্বাদ লাগবে। এসময় অতিরিক্ত চর্বি এবং চিনি যুক্ত ¯œ্যাকস্ খেতে ইচ্ছা করবে। এছাড়া কেউ কেউ এলকোহল পান করতে চান।
তাই ওজন বৃদ্ধি পেলে সরাসরি ওজন কমানোর কোনো ঔষধ সেবন করবেন না। নিজ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহন না করে জানতে হবে কেন ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে কি কারনে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তখন কারন অনুযায়ী চিকিৎসা করে ওজন কমাতে হবে।