সোনা চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক লকার থেকে

Total Views : 174
Zoom In Zoom Out Read Later Print

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস বিভাগের একটি গুদামের লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরি হয়ে গেছে বলে পত্রপত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাকে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়। চুরি যাওয়া সোনার মূল্য ৪৭ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এত টাকা মূল্যের সোনা টার্মিনালে ভবনের ভেতরে সুরক্ষিত স্থান থেকে কীভাবে চুরি হলো, তা এক বড় প্রশ্ন। বিমানবন্দরের কেপিআই এলাকা হওয়ায় বাইরের লোকের সেখানে ঢোকা এবং সোনা চুরি করা অসম্ভব। এটা ভেতরের লোকেরই কাজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাস্টমস বিভাগের মতে, চুরি যাওয়া সোনা ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্য উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, একদিনে নয়, বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে সোনা সরানো হয়েছে। আর সেটা ভেতরের লোকজনই করেছে। আরো প্রশ্ন উঠেছে, এত বেশি সোনা এতদিনে লকারে রাখা কেন? সাধারণত চোরাচালানের সোনা উদ্ধার হওয়ার পর জব্দ তালিকা করে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পাঠানো হয়। এক-দু’দিনের মধ্যেই এটি সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন, ঘটলো, সেটাও এড়িয়ে মতো নয়। এঘটনায় কাস্টমস বিভাগ থেকে একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এও জানা গেছে, চার সহকারী কাস্টমস কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করে রোববার গভীর রাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এটা কারো অজানা নয়, বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসি ক্যামেরার নজরদারীর আওতায় রয়েছে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাও সেখানে বিদ্যমান। সুতরাং আশা করা যায়, উপযুক্ত তদন্তে সোনা চোর শনাক্ত ও পাকড়াও করা অসম্ভব হবে না। অত্যন্ত পরিতাপজনক হলেও বলতে হচ্ছে, বিমানবন্দর কেপিআইভুক্ত স্থাপনা হওয়ায় এর নিরাপত্তা সুরক্ষার যত ব্যবস্থা থাকার কথা সব ব্যবস্থাই মজুদ আছে। পুরো বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের লোকজন ছাড়াও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা ও সরকারি সংস্থার লোকজন কাজ করে। তাদের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে রক্ষিত সোনা বা মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিমানবন্দের সার্বিক নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে দঁাঁড় করিয়ে দেয়। এর আগেও কাস্টমসের গুদাম থেকে সোনাদানা, মোবাইলফোন ও বিভিন্ন সম্পদ খোঁয়া গেছে। মালামাল লাপাত্তা হওয়ার ঘটনায় মামলাও হয়েছে। বিমানন্দরে যাত্রী নিরাপত্তা ও তাদের মাল-সামানের নিরাপত্তা নিয়েও ইতোপূর্বে বহু কথা হয়েছে। কিন্তু তাতে যাত্রী ও মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। নিরাপদ ঘোষিত এলাকা যদি যাত্রী ও মালপত্রের নিরাপত্তা নিয়ে সংকিত থাকতে হয়, তবে তারচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার যে ত্রুটি ও ফাঁক রয়েছে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। গত ৩১ জুলাইয়ের ঘটনা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ওইদিন বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ রুমেই এক চোর ঢুকে পড়ে। ছাদ বেয়ে উঠে ভেন্টিলেটারের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়লেও বের হতে পারেনি। কয়েক ঘণ্টা ভেতরে আটকে থাকার পর পুলিশ চোরকে গ্রেফতার করে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিরংকুশ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তার সঙ্গে আরো বিভিন্ন কর্তৃপক্ষও রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার দায় তাদের কারো পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া তাই সম্ভব নয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।

কাস্টমস বিভাগের গুদামের লকার থেকে সোনা গায়েব হওয়ার এ ঘটনা হয়তো এখনি জানা সম্ভব হতো না। যদিনা গুদামে অটোমেশনের কাজ শুরু হতো। ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার একে এম নূরুল হুদা পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, আট দিন আগে গুদামটির অটোমেশনের কাজ শুরু হয়। কাজের অংশ হিসেবে গুদামে থাকা সোনা গণনার কাজ শুরু হয়। তাতেই জানা যায় ওই সোনা চুরির ঘটনা। তার মতে, চুরির ঘটনা আগেই ঘটেছে। গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হওয়ায় সেটি ধরা পড়ে; তাই লকার ভাঙার নাটক তৈরি করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, সোনা চোর যে, ধারে কাছেই আছে, তার একথা থেকে সেটা স্পষ্ট। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার, বিভাগ হিসাবে কাস্টমসের খুব একটা সুনাম নেই। এক শ্রেণীর কাস্টমস কর্মকর্তার আচরণ-ব্যবহার যেমন খারাপ, তেমনি তাদের সততা, নীতি-নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাদের দ্বারা সেবাপ্রার্থী মানুষ হয়রানিই শুধু নয়, জুলুমেরও শিকার হয়। সামগ্রিক অবস্থার এই প্রেক্ষাপটে কাস্টমস বিভাগের সমুদয় গুদাম অনুপুঙ্খ পরিদর্শন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন। তাহলে জানা যাবে, আর কোথাও থেকে সংরক্ষিত সোনা বা অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য খোঁয়া গেছে কিনা। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।

See More

Latest Photos