করোনাকালে অনলাইনভিত্তিক পণ্য বিক্রি শুরু করেন শাহিন মিয়া ও তাঁর স্ত্রী রুবাইয়া রহমান মনি। ‘ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে তারা দুটি ওয়েবসাইট করেন। এক পর্যায়ে এসব ওয়েবসাইটে মাত্র ১ হাজার ৩৫০ টাকা দিয়ে যত ইচ্ছা নিবন্ধন করে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের অধীনে দিনে ১৫ টাকা করে আয়ের সুযোগ দেন। এভাবে ২০২১ সালের ১৫ জুন থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাসে গ্রাহকের কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন এ দম্পতি। শাহিন ইপিসি গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রুবাইয়া রহমান পরিচালক ছিলেন।
স্বামী-স্ত্রীর অর্থ পাচার এমএলএমের মাধ্যমে





অনুসন্ধানে এসব অর্থের মধ্যে ৫৪ লাখের বেশি টাকা পাচারের তথ্যপ্রমাণ পেয়ে শাহিন দম্পতি ছাড়াও তিনজনের বিরুদ্ধে গত সোমবার মামলা করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম শাখার এসআই অলক চন্দ্র হালদার।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন– ইপিসির ফাইন্যান্স ডিরেক্টর সাদ্দাম হুসাইন, মার্কেটিং ডিরেক্টর রফিকুল ইসলাম ও সফটওয়্যার প্রোগ্রামার মুহাম্মদ ফোরকান।
জানা গেছে, শাহিন ২০২১ সালের ৩০ জুন ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন। বাড্ডা লিংক রোডের স্পিরিং শামস ভবনে কার্যালয় ভাড়া করে কার্যক্রম শুরু করেন। অনুমোদন না থাকলেও তিনি ইপিসি গ্লোবালের মাধ্যমে এমএলএম কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মূলত প্রতারণার জন্যই শাহিন তাঁর স্ত্রী ও বন্ধুদের নিয়ে চক্র গড়েন। বাল্যবন্ধু সাদ্দাম, পূর্বপরিচিত রফিকুল ও ফোরকানকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে বসান। প্রতিষ্ঠানের দুটি ওয়েবসাইটে হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, দারুচিনি, এলাচসহ বিভিন্ন মশলা, ভিটামিনসহ ২১ ধরনের পণ্য বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা হতো।
এক পর্যায়ে করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে ১৩৫০ টাকায় অ্যাকাউন্ট এবং প্রতিটি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে প্রতিদিন ১৫ টাকা করে লাভ দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেয় ইপিসি। নিবন্ধিত গ্রাহক নতুন সদস্য জোগাড় করলে পাবে কমিশন। লোভে পড়ে অনেকেই বিনিয়োগ করেন। কিন্তু পরে লভ্যাংশ দূরে থাক, মূলধন ফেরত পাননি গ্রাহকরা। এভাবে কয়েক মাসেই গ্রাহকের কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে ২০২১ সালের ২ নভেম্বর র্যাব ইপিসিতে অভিযান চালায়। অভিযানের মধ্যেই ফোরকান ওয়েবসাইটগুলো থেকে পরিকল্পিতভাবে গ্রাহকের সব তথ্য মুছে ফেলে তা বন্ধ করে দেন। পরে এ ঘটনায় শাহিন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা হয়। এরপর সিআইডি শাহিনের অর্থ পাচার-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে।
সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে, ২০২১ সালের ১৫ জুন থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া অর্থের মধ্যে ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৪৩৩ টাকা পাচার করেছে চক্রটি।
শাহিনের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাদেকপুরে। তাঁর স্ত্রীর বাবার বাড়ি নরসিংদী সদরের আনন্দী গ্রামে। আসামিদের মধ্যে সাদ্দামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, রফিকুলের বগুড়ার গাবতলী ও ফোরকানের বাড়ি বরগুনার বামনায়। তবে তারা সবাই ঢাকায় বাস করেন। বর্তমানে কার্যালয় বন্ধ। শাহিনসহ বাকিরা লাপাত্তা।