শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনে সরকারের আগ্রহ রয়েছে। এজন্য নজর দেয়া হয়েছে শিশুশিক্ষার ওপর। তাগিদ আছে, সব শিশুকে স্কুলে হাজির করার। কন্যাশিশুকে অনেক সময় অভিভাবকরা স্কুলে দিতে উৎসাহ পান না। দারিদ্র্যও একটি বড় বাধা। এজন্য শিক্ষাজীবনের প্রথমে স্কুলকে শিশুর কাছে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে স্কুল ফিডিংসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অন্যতম একটি আয়োজন, বছরের একেবারে শুরুতে বই উৎসব। শিশুরা বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়ে খুশিতে মেতে উঠবে। এ ধরনের একটি উৎসব তাদের স্কুলে হাজির থাকার আগ্রহ বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু প্রতি বছর এই উৎসব হোঁচট খাচ্ছে সময়মতো বই ছাপতে না পারায়।
ছাপার কাজ যথাসময়ে শেষ করুন
এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, এবারও বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া যাবে কি না সংশয় রয়েছে। কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, প্রাথমিকের শিশুদের বই বছরের প্রথম দিনই সরবরাহ করা যাবে। কারণ ইতোমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানাচ্ছে, চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাবে। গত বছর বই ছাপানো যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় বছরের প্রথম দিন শিশুদের হাতে তা তুলে দেয়া যায়নি। কোনো উপজেলায় নতুন বই গেছে মার্চ মাসে, কোনো উপজেলায় এপ্রিলে। এর আগের বছরগুলোতেও একই সমস্যা দেখা গেছে। তাই এনসিটিবি আশ্বাস দিলেও প্রাথমিকের ছাত্রদের হাতে যথসময়ে বই পৌঁছানো নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
আগামী শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন বই যুক্ত হচ্ছে। নতুন করে এগুলোর পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু এগুলো ছাপার কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপার কার্যাদেশই এখনো দেয়া হয়নি। এর ওপর বইয়ের চাহিদাও বেড়েছে। এবার মাধ্যমিকের জন্য বই ছাপাতে হবে মোট মিলে ৯ কোটি ৭৩ লাখের বেশি। প্রাথমিক, প্রাক-প্রাথমিক মিলে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য সর্বমোট ৩২ কোটি বই ছাপাতে হবে। কাজটি বিশাল। স্বল্পসময়ে সব বই ছেপে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে তা তুলে দিতে পারবে, এমন আস্থা এনসিটিবি সৃষ্টি করতে পারেনি। তারা আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সময়মতো উদ্যোগী হয়েছে এমন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমান সরকার শিক্ষাকে আমূল বদলে দেয়ার যে প্রকল্প নিয়েছিল তা বরবাদ হয়েছে মূলত একশ্রেণীর লোভী অসাধু চক্র এবং কিছু আদর্শহীন ব্যক্তির কারণে। বিপুল বই ছাপানোর কাজটিকে একটি শ্রেণী দেখেছে ব্যবসা হিসেবে। তারা ছাপার কাজ পাওয়ার জন্য নানা অনিয়ম দুর্নীতি করেছে। এতে করে সময়মতো ছাপার কাজটি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি অবহেলিত হয়েছে। একই সাথে দেখা গেছে, মানহীন কাগজ, ত্রুটিপূর্ণ ছাপা ও ভুলেভরা পাঠ্যবই। আদর্শহীন কিছু ব্যক্তি পাঠ্যের ভেতর নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে এক ধরনের অন্যায়ের শিকার হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন বই তুলে দিতে হলে কর্তৃপক্ষকে হতে হবে আন্তরিক। দ্রুত ছাপার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।