৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পর ইসরাইলের পালটা হামলায় গাজা মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। হামাস ও ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এযাবৎ ইসরাইলি নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪০০ জন, এর বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আল আহলি আরব হাসপাতালে ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলায় প্রায় পাঁচশ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এ হাসপাতালে শুধু রোগীই ছিল না, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এক হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে ছয় শতাধিক রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মী ছিল।
বাতিল করা হোক গাজায় ইসরাইলের স্থলযুদ্ধের সিদ্ধান্ত
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করলেও ইসরাইল তা অস্বীকার করেছে। গাজা কর্তৃপক্ষের দাবির মুখে বিস্ফোরণ নিয়ে ইসরাইলের সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের তথ্য তুলে ধরার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। অতীতে ইসরাইলের এমন অনেক বিবৃতি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে বোমাবর্ষণের পর প্রথমে এক অ্যাক্স (টুইট) বার্তায় ইসরাইল বলেছিল, হাসপাতালে হামাসের সদস্যরা অবস্থান করছিল বলেই সেখানে রকেট হামলা হয়েছে। ইসরাইল, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারের আগেই এ বার্তাটি ডিলিট করে দেয়। ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা বারগুটি এ টুইট বার্তার রেকর্ড তার কাছে আছে বলে দাবি করেন। ওদিকে আলজাজিরা কর্তৃক ধারণকৃত এক ভিডিওতে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে গাজার হাসপাতালের আশপাশে বিমান হামলা চালানো শুরু করে ইসরাইল। ওরা ৬টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত চারটি জায়গায় বোমা ফেলে। জবাবে গাজা থেকে বেশ কয়েকটি রকেট ছোড়া হয়, যার সব মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দেয় ইসরাইলের আয়রন ডোম। এসব রকেট ধ্বংস করার ঠিক ৫ সেকেন্ড পর গাজায় ইসরাইলি বিমানবাহিনীর চালানো একটি হামলা ভিডিওতে ধরা পড়ে। এর ঠিক ২ সেকেন্ড পর বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে হাসপাতালটি।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, এর দুদিন আগেই ইসরাইল এ হাসপাতালটি খালি করে দেওয়ার জন্য বলেছিল। এছাড়াও ইসরাইল গাজার উত্তরাংশের ২২টি হাসপাতাল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ওদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইসরাইলি বাহিনীর রকেট হামলায় ইতোমধ্যে ৫৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২৩টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরাইলি হামলায় এযাবৎ ২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। তবে এ বোমাবর্ষণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্তব্যে সবাইকে স্তম্ভিত ও হতবাক করেছে। ইসরাইল সফরে গিয়ে বাইডেন সবাইকে বিস্মিত করে নেতানিয়াহুকে বলেন, “আল আহলি আরব হাসপাতালে বোমা হামলাটির জন্য দায়ী ‘অন্য দল’, আপনার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।” বাইডেন এখানে ‘অন্য দল’ বললেও নির্দিষ্ট করে কিন্তু বলতে পারেননি কোন দল এ কাজটি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাইডেন এখানে জঘন্য এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোয় যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে ইসরাইলকে রক্ষার জন্যই তাৎক্ষণিক এ বক্তব্য দিয়েছেন।
গাজায় ইসরাইলের এ অন্যায় ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে সাপোর্ট দেওয়ায় খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বড় শহরগুলোয় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে প্রতিবাদী মিছিল বের হয়েছে। এমনকি ইহুদিরাও এ মিছিলে শামিল হয়েছেন। ১৮ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইল সরকারকে চাপ দিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বেশ কয়েকশ বিভোক্ষকারী যুদ্ধবিরতির দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ইহুদিদের মধ্যে অনেকেই কালো টি-শার্ট পরিহিত ছিলেন। টি-শার্টে ‘ইহুদিরা এখনই যুদ্ধবিরতি চাই,’ ‘আমাদের (ইহুদি) নামে যুদ্ধ নয়,’ স্লোগান লেখা ছিল। প্রতিবাদকারী এসব ইহুদি সম্প্রদায়ের মানুষ বিক্ষোভ চলাকালে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জায়োনিস্টরা কোনো অবস্থাতেই ইহুদিদের নামে মানবতাবিরোধী কাজ করতে পারে না। সে অধিকার তাদের দেওয়া হয়নি। আমরা ফিলিস্তিনি ভাইদের পক্ষে আছি। প্রকৃত ইহুদিরা কখনো ফিলিস্তিনি ভাইদের ক্ষতি কামনা করে না। জায়োনিস্ট ইসরাইলিরাই ফিলিস্তিনি ভাইদের বিরুদ্ধে রক্তপাত ঘটাচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি। ‘জিউস ভয়েস ফর পিস’ নামে ইহুদিদের একটি সংগঠন এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে। ক্যাপিটল হিল থেকে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করে। গাজায় হামলার প্রতিবাদে গেল সপ্তাহের শুরুর দিকে হোয়াইট হাউজের বাইরেও বিক্ষোভ হয়। সেসময় সেখান থেকেও আটক করা হয়েছিল কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে।
এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব শিক্ষার্থী যাতে ওয়াল স্ট্রিট ও সিলিকন ভ্যালির মতো প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে চাকরি করতে না পারে, প্রভাবশালী ইহুদি গোষ্ঠী সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, পুনরায় প্রতিবাদ মিছিল যাতে বের না করে এবং শিক্ষার্থীদের ভেতর আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য, গোপনে ধারণকৃত বিক্ষোভকারীদের ছবি বড় করে ডিজিটাল বোর্ডে স্থাপন করে, ক্যাম্পাসের সর্বত্র প্রচারের ব্যবস্থাও করেছে তারা। এ ঘটনাটি ঘটেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিক্ষোভকারী অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর স্কলারশিপও ইতোমধ্যেই বাতিল করা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মুসলিম দেশগুলো ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ফিলিস্তিনি মানুষের পক্ষে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইহুদিরা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রভাব বিস্তার শুরু করে। বর্তমানে তারা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ব্যক্তি বা দল, যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, ইহুদি প্রভাবমুক্ত হয়ে দেশ চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসার পর গত চার বছরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে রাজনৈতিক সুস্পষ্ট মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ১৮ অক্টোবর ইসরাইলে সফরে গিয়ে বাইডেন নেতানিয়াহুকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি ইসরাইলের পাশেই আছেন। এর আগে সংঘর্ষ লাগার পর, দু-দুজন মন্ত্রীকে ইসরাইলে পাঠিয়েও বাইডেন যেন স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। এ অঞ্চলে কোনো যুদ্ধ ও সংঘাত চলাকালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এভাবে ইসরাইলে ছুটে যাননি। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ইহুদিদের প্রতি মার্কিনিদের দুর্বলতা কোথায়? ইহুদিরা মার্কিনিদের কীভাবে প্রভাবিত করে রেখেছে? এর পেছনে কী কী ফ্যাক্টর কাজ করছে, সে বিষয়ে আলোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে মনে হয়। এজন্য ছোট্ট একটি খতিয়ান পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে।
পৃথিবীতে ইহুদিদের মোট জনসংখ্যা দেড় কোটির মতো। ইসরাইলে বসবাস করে মাত্র ৫৪ লাখ। বাকি এক কোটি ইহুদি পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ ইহুদি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে, যা সে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। ইহুদিদের জনসংখ্যা কম হলেও এ সম্প্রদায় থেকেই বেরিয়ে এসেছেন কার্ল মার্কস, কপারফিল্ড, আইনস্টাইন, নোয়াম চমস্কির মতো জগৎখ্যাত ব্যক্তিরা। যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ইহুদি। অর্থাৎ প্রতি চার/পাঁচ জনের মধ্যে একজন ইহুদি। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা ইহুদি। The World University Ranking সাইটে পৃথিবীর প্রথম ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫ বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইহুদি সম্প্রদায় থেকে আসা। যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের সবচেয়ে ক্ষমতাধর লবিস্ট গ্রুপের নাম হলো American-Israel Public Affairs Committee বা AIPAC. এই AIPAC এতই প্রভাবশালী যে, বাকস্বাধীনতার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অন্য সব বিষয়ে সমালোচনা করা গেলেও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না বা কেউ সাহস করেন না। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে আছেন ইহুদিরা। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানি ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলো ইহুদিদের দখলে। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলত করপোরেট হাউজগুলো। এসবের অধিকাংশের মালিক ও নিয়ন্ত্রণকর্তা হিসাবে বসে আছেন ইহুদি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা।
সিএনএন, ফোক্স, ইএসপিএন, এবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ইত্যাদি ইহুদি মালিক নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা হলো নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এসবের মালিক এবং সম্পাদকও ইহুদি। এমনকি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গও একজন ইহুদি। আমার এ লেখায় শব্দের সীমাবদ্ধতা থাকায়, আধুনিক সমরাস্ত্র কারখানার সঙ্গে ইহুদিদের সম্পৃক্ততার কথা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হলো না। ইহুদি সম্প্রদায়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কারোর পক্ষেই এদের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে, ইহুদি সম্প্রদায়কেই তোয়াজ করে চলতে হয়। তাদের হাতে রাখতে না পারলে অনেক সময়, ক্ষমতায় টিকে থাকাও মুশকিল হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে AIPAC বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিয়ে থাকে। কথিত আছে, এসব কারণে শুধু ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিভাবে কাজ করে যেতে হয়।
ইসরাইল এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে, তারা গাজায় তিন ধাপে স্থলযুদ্ধ শুরু করবে। প্রথম ধাপে তারা সামরিক অভিযান চালিয়ে হামাসকে পরাজিত করে তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করে দেবে। দ্বিতীয় ধাপে হামাসের সরকার পরিচালনার সক্ষমতা ধ্বংস করবে এবং সর্বশেষ ধাপে গাজায় নতুন একটি সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হবে; যা গাজা ও ইসরাইলের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করবে। ইসরাইল স্থলযুদ্ধের পরিকল্পনা যেভাবেই করুক না কেন, এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে তারা হয়তো ভালো করবে, কিন্তু যে মুহূর্তে শহর এলাকায় প্রবেশ করবে, তখনই আসল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কারণ, সামরিক অভিযানে, শহরাঞ্চলে যুদ্ধ উভয় পক্ষের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আগে থেকে যে পক্ষ শহরের ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলে নিতে পারবে, তারা অধিক সুবিধা লাভ করার সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে হামাস ইতোমধ্যে গাজার শহরাঞ্চলে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে রেখেছে। হামাসকে পরাজিত করতে হলে ইসরাইলি সৈন্যদের প্রত্যেকটি ভবন এবং সে ভবনের প্রতিটি ফ্লোর, প্রতিটি রুম, প্রতিটি ভূগর্ভস্থ ভান্ডার এবং হামাসের তৈরি প্রত্যেকটি সুড়ঙ্গ সার্চ অ্যান্ড অপারেশনের মাধ্যমে ক্লিয়ার করে যেতে হবে। হামাস গাজায় যে সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে, তা অনেক বিস্তৃত। কাজেই এ যুদ্ধে ইসরাইল সৈন্যদের হতাহতের সংখ্যা কল্পনাতীতভাবে বেড়ে যেতে পারে। এমন একটি অভিযান সম্পন্ন করাও সময়সাপেক্ষ বটে। ইসরাইলের জন্য এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং মিশন হবে সন্দেহ নেই। শহরাঞ্চলের এ যুদ্ধকে বলা হয় Fighting in Build Up Area, সংক্ষেপে FBUA।
রাশিয়া যখন ইউক্রেনে ভূমি দখল করে নিয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব চেঁচিয়ে উঠেছিল। তারা রাশিয়ার সেই অভিযানকে সন্ত্রাসী আক্রমণ আখ্যা দিয়েছিল। ঠিক একইভাবে ইসরাইল যদি গাজায় স্থলযুদ্ধ শুরু করে, পশ্চিমা বিশ্ব স্বীকার করুক বা না করুক, ইসরাইলের এ আক্রমণ সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ হিসাবেই বিবেচিত হবে। যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখেও ইসরাইল যদি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে এ সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে যায়, তাহলে তা বিশ্ব ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। পশ্চিমাদের এ দ্বিমুখী আচরণ ইতিহাস কোনোদিনও ক্ষমা করবে না। এ অভিযানে গাজা থেকে যদি ফিলিস্তিনিদের শারীরিকভাবে বিতাড়িতও করা হয়; তারপর ইসরাইল কিংবা তার পশ্চিমা মিত্ররা ফিলিস্তিনিদের পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং মানবিক অধিকারের দাবি থেকে একবিন্দুও বিচ্যুত করতে পারবে না।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা