কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পঞ্চগড়ে এবছর চাহিদার চেয়ে দেড়গুণ বেশি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। জোগান বেশি থাকায় গরু বিক্রি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত স্থানীয় খামারিরা। তবে দেশের বাজারে ভারতীয় গরু না ঢুকলে লাভের আশা করছেন তারা।
পঞ্চগড়ে চাহিদার চেয়ে দেড়গুণ বেশি পশু প্রস্তুত





সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্য ও ওষুধের দামের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু বেশি হাঁকানো হচ্ছে। তবে ভারতীয় গরু আমদানি করা হলে খামারি ও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) পঞ্চগড় জেলা শহরের রাজনগর পশুর হাটে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমে উঠেছে পশু কেনাবেচা। এদিন ভারতীয় গরুর উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। তবে একটি সূত্র বলছে, অবৈধপথে আসা গরু হাটে তোলা হয় না আগের মতো। সরাসরি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৩ পাশ জুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। এই সীমান্ত এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এসব পয়েন্ট দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রাতের আঁধারে চোরাইপথে ভারতীয় গরু ঢুকছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। তবে বিজিবির দাবি, পঞ্চগড়ে করিডোরের ব্যবস্থা না থাকায় ভারতীয় গরু কোনো সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় বর্তমান উভয়দেশের সীমান্তরক্ষীদের কড়াকড়িতে গরু কম আসলেও সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্ত দিয়ে অবাধে গরু ঢুকছে। এই সীমান্তের একটি অংশে প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এছাড়া ভারতীয় ৬টি গ্রাম রয়েছে কাঁটাতারের এই পাশে বাংলাদেশি গ্রামগুলোর সঙ্গে মিলিত। ফলে এই সীমান্ত চোরাকারবারিরা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একজন বলেন, প্রতিদিনই এই সীমান্ত দিয়ে গরু ঢুকছে। গরু প্রতি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে হাটে উঠানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর স্থানীয় বিজিবি থেকে একটি ছাড়পত্র নিয়ে সেসব ভারতীয় গরু করিডোরের মাধ্যমে বৈধ করার কথা। সেক্ষেত্রে গরু প্রতি একটি নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব পাবে সরকার। কিন্তু চোরাইপথে আসা এসব গরু করিডোর ছাড়াই হাটে কেনাবেচা হচ্ছে। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও খামার মালিকরা। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
বিজিবি ঘাগড়া বর্ডার আউট পোস্টের (বিওপি) ক্যাম্প কমান্ডার লুৎফর রহমান বলেন, সীমান্তে আমাদের নজরদারি জোরদার রয়েছে। আমরা চোরাকারবার রোধে সীমান্তে মানুষদের সচেতন করছি। তারপরও একটি চক্র হয়তো বিভিন্ন কৌশলে সীমান্তে গরু পারাপার করছে। তথ্য পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি, অনেকসময় গরুসহ বিভিন্ন পণ্য জব্দ করি।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, পঞ্চগড়ে ১৪ হাজার ৮০৯টি পশুর খামার রয়েছে। জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৮টি। এর বিপরীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৭১টি গবাদিপশু। এরমধ্যে গরু ৪০ হাজার ৮৩০টি, মহিষ ৪৬টি, ছাগল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০১ এবং ভেড়া ১০ হাজার ৯৯০টি। উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ৪৫ হাজার ১৯৪টি।
পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, জেলায় এবার কোরবানির চাহিদার চেয়ে গবাদিপশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। এরই মধ্যে কোরবানির পশুর হাট শুরু হয়েছে। হাটগুলোতে সুস্থ্য-সবল পশু বেচাকেনায় সহযোগিতার জন্য মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।