৩৫ ড্রেজার ক্রয় প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে

Total Views : 99
Zoom In Zoom Out Read Later Print

মুখ থুবড়ে পড়েছে সাত বছর মেয়াদি সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ড্রেজার ক্রয় প্রকল্প। ছয় বছরে এর অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। চলমান ডলার সংকটে এলসি খোলায় জটিলতা এবং চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। জানা গেছে, ‘৩৫ ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পে ঘটেছে উল্লিখিত ঘটনা। এই প্রকল্পের ৬১টি ক্রয় প্যাকেজের মধ্যে ২৭টির কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বাকি ৩৪টি প্যাকের কাজ আটকে আছে। ফলে সময়মতো সুফল মিলছে না প্রকল্পের। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প তত্ত্বাবধানের জন্য বুয়েটের একজন ছাত্রকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনিই করেন মান যাচাইয়ের কাজ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ডলার সংকট একটি বড় সমস্যা। এলসি খোলায় জটিলতা হলে স্বাভাবিক কারণেই প্রকল্পের কাজে ধীরগতি থাকবে। তবে এ রকম প্রকল্পগুলোয় বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, ডলার এবং দেশীয় অর্থ সংকটসহ নানা কারণে এ অর্থবছর সার্বিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নও কম হবে। গত অর্থবছর যা হয়েছে, সেটিও হয়তো ছুঁতে পারা যাবে না। 
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কিস্তু পরবর্তী সময়ে সংশোধনের মাধ্যমে ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এটির বাস্তবায়ন সময়কাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নানা জটিলতায় দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৫টি ড্রেজারসহ ১৬১টি জলযান সংগ্রহ, ৩টি ড্রেজার বেইজ নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জে একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার কথা। এটি বাস্তবায়ন করছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। 
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জলযান নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, স্টিল, ইঞ্জিন, জেনারেটর, পাম্প এবং খুচরা যন্ত্রাংশের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি যেসব জলযান ও যন্ত্রপাতি কেনার দরপত্র চলমান আছে, সেগুলোর মূল্য আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। কেননা প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ১ ডলার সমান ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা ছিল। কিন্তু পরে দাম বেড়ে যাওয়ায় ১ ডলার সমান ১১০ টাকায় দাঁড়ায় (বর্তমানে সেটি আরও বেড়ে ১১৭ টাকা হয়েছে)। এ পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় ২৬টি জলযানের সংখ্যা কমিয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন করা হয়। ডলার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি চলমান ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রকল্পে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। গত বছর কোনো ধরনের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। কেননা আগের যেসব টেন্ডার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে, তারা এখনো এলসি খুলতে পারেনি। তাই কাজও শুরু হয়নি। এছাড়া ক্রয় প্রক্রিয়াতে রি-টেন্ডারের কারণে ঠিকাদার নিয়োগে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংস্থান অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি অনেক কম। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এতে দেখা যায়, প্রকল্প দলিলে সংযুক্ত কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। ফলে প্রকল্পে ধীরগতি বিরাজ করায় নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না। 
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যন্ত্রপাতির অবস্থান সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য প্রকল্প অফিস থেকে তথ্য নেয় পরিবীক্ষণকারীরা। কিন্তু তথ্য অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে কোনো যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রকল্পের কাজ তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনের সময় বুয়েটের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন ছাত্র প্রকল্পের তত্ত্বাবধান কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনিই বুয়েটের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থেকে কাজের মান তদারকি করেন, যা কাম্য নয় বলে মনে করছে আইএমইডি। 
প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সংশোধিত ডিপিপিতে মোট ৬১টি প্যাকেজের ক্রয় পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে পণ্যের ২৫ এবং সেবার ২টি কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। এছাড়া প্যাকেজ ৩১-এর ক্ষেত্রে আরডিপিপিতে দরপত্র আহ্বানের তারিখ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর এবং চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ ২০২৩ সালের মার্চ উল্লেখ রয়েছে। এটি ভুল বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া প্রকল্প অফিস থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্যাকেজ-৭, প্যাকেজ-৮, প্যাকেজ-১০ ও প্যাকেজ-১২ এর প্রাক্কলিত মূল্যের প্রকৃত চুক্তিমূল্য বেশি। এক্ষেত্রে প্রকল্পের অনুমোদিত ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাসময়ে ক্রয় কাজ শেষ করতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

See More

Latest Photos