এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সময়সংকটের কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দল নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা উল্লেখ করে আবেদন আহ্বান নাও করতে পারে। ইসির পক্ষে বলা হচ্ছে, গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে আবেদন আহ্বানের বিষয়টি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়। এরই মধ্যে অনেক দলের আবেদন জমা হয়েছে। গত বছর আগের ইসির কাছে আবেদন করে যেসব দল নিবন্ধন পায়নি সেসব দলের অনেকে তাদের আবেদন পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ জানিয়েছে।
তোড়জোড় দল নিবন্ধনে





এ ছাড়া নিবন্ধিত কিছু দল দ্বাদশ সংসদের পাতানো নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে এখন বিপাকে। কয়েকটি দলে ভাঙন শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে এসে দলের একাংশ দাবি করছে, তাদের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। সে কারণে নিবন্ধনের তথ্যে সংশোধন আনতে হবে।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার দল নিবন্ধনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দল নিবন্ধনের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে আবেদন আহ্বান করতে হবে, এ ধরনের কোনো বিধান নেই। আর জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগে এ প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়ও নেই। আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দল নিবন্ধনসহ নির্বাচনী আইনের সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করার যে সুপারিশ রেখেছে তা বাস্তবায়ন করা না হলে বিদ্যমান আইনেই দল নিবন্ধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নতুন দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের লক্ষ্যে বিদ্যমান এক-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির পরিবর্তে ১০ শতাংশ জেলা এবং ১০০ উপজেলার পরিবর্তে ৫ শতাংশ উপজেলা-থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম পাঁচ হাজার সদস্য থাকার বিধান করার সুপারিশ করেছে।
আগে নিবন্ধন না পাওয়া দলগুলোর আবেদন সম্পর্কে মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, তাদের বিষয়টি আগের কমিশন নিষ্পত্তি করে গেছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের কিছু করার নেই। বর্তমান কমিশনের কাছে সিদ্ধান্ত চাইতে হলে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৩টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আদালতের নির্দেশে এবি পার্টি নিবন্ধন পায়। এ ছাড়া নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)। এ অবস্থায় এখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পেতে নতুন ৯৩টি দল আবেদন করে। এর মধ্যে ভুঁইফোড় দল হিসেবে পরিচিত দুটি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দেলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে নিবন্ধন দেয় তৎকলীন নির্বাচন কমিশন। তার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে আবেদন করা ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায়।
যে ১৩ দলের নতুন আবেদন : ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিবন্ধন চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে ১৩টি দল। এগুলো হচ্ছে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ বাংলাদেশ), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি), সমতা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন আন্দোলন, বাংলাদেশ বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক দল, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ (এনসিবি), বাংলাদেশ মুসলিম পার্টি-জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ, তৃণমূল জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, সর্বজন বিপ্লবী দল, মৌলিক বাংলা এবং বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন আন্দোলন (প্রস্তাবিত)।
৭ মাসে ১৯টি দলের আত্মপ্রকাশ : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রায় ১৯টি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এসব দলের মধ্যে সমতা পার্টি এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। অন্য দলগুলো হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে থাকা ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), দেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, মুক্তির ডাক ৭১, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও আমজনতার দল। এই দলগুলোও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইসির তালিকায় অনিবন্ধিত ৮৭টি দল : নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব দল আবেদন করে নিবন্ধন পায়নি, সেসব দলের তালিকাও সংরক্ষণ করে রেখেছে। এ ধরনের অনিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৮৭। দলগুলো হচ্ছে নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, মুসকিল লীগ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ), বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও নন-প্রবাসী কল্যাণ দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ আমজনতা পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি (বাংলাদেশ টিজেপি), সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ (বিএনডিএল), গণরাজনৈতিক জোট (গর্জো), বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নতুন ধারা বাংলাদেশ (এনডিবি), বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, জাতীয় জনতা পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিপি), ভাসানী অনুসারী পরিষদ, নাকফুল বাংলাদেশ, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস, মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি (জেএসপি), যুব সেচ্ছাসেবক লীগ, ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ মাইনরিটি পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গলীগ, গণ অধিকার পরিষদ (ড. রেজা কিবরিয়া), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি), জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, সাধারণ জনতা পার্টি (জিপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ মানবতাবাদী দল (বিএইচপি), বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি (বিইউআইপি), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, গণ অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ গরিব পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট (বিজেএফ), বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ সত্ সংগ্রামী ভোটার পার্টি, জাতীয় ইসলামী মহাজোট, ফরওয়ার্ড পার্টি, ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী গ্রুপ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাজাহান সিরাজ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিজেএল), স্বদেশ কল্যাণ কর্মসূচি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।