৩৮ লাখ মানুষ ২ বছরে দেশে কেন অতি দরিদ্র হয়েছে , জানা গেল কারণ

Total Views : 30
Zoom In Zoom Out Read Later Print

মূল্যস্ফীতির প্রভাব বেশি হলেও তা মোকাবিলায় আসন্ন বাজেটে (২০২৫-২৬) ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র উদ্যোগ থাকছে সীমিত। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তুলনায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমছে ৪ লাখ ২ হাজার। সেখানে এই কর্মসূচিতে নতুন করে যোগ হয়েছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার সুবিধাভোগী। যা আগামী অর্থবছরে যোগ হচ্ছে ৬ লাখ ২৪ হাজার। অথচ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে গত ২ বছরে দেশে অতি দরিদ্র হয়েছে ৩৮ লাখ মানুষ। আর শিগগিরই মূল্যস্ফীতির পারদ কমছে না বিশ্বব্যাংক এমন আভাস দিয়ে বলেছে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অতি দরিদ্রের বড় একটি অংশ এই কর্মসূচির আওতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

এছাড়া আসন্ন বাজেটে (২০২৫-২৬) সব ধরনের ভাতা সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ একশ টাকা বেড়ে ভাতার অঙ্ক (৬৫০-৯০০) টাকায় উন্নীত করেছে, যা দিয়ে দারিদ্র্যবিমোচন খুবই কঠিন। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সংখ্যা কমানো হচ্ছে।

সম্প্রতি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে উল্লিখিত সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ এ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বাজেটে ১২ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে মেটাতে বরাদ্দ থাকছে ১৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ১৭ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন অর্থবছরে এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বাড়ছে।

এদিকে অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) গবেষণা তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৭৮ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার মধ্যে ৩৮ লাখ লোক অতি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। আর ৯৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ অতিমাত্রায় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা এবং ভাতার অঙ্ক বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিদিরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থ সংকটের কারণে বড় ধরনের উদ্যোগ থাকছে না সরকারের পক্ষ থেকে।

এদিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ঘিরে দুর্নীতি, অপচয় প্রতিরোধ ও প্রকৃত সুবিধাভোগী শনাক্ত করার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্তর্বর্তী সরকারের বলয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও এ খাত ঘিরে দুর্নীতির বিষয়টি প্রথমে আলোচনায় নিয়ে আসেন সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নিজেই। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘শুধু অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সফল হবে না। সামাজিক সুরক্ষা খাতে দুর্নীতি বড় বাধা, ফলে শক্তিশালী তদারকি প্রয়োজন। এ খাতে উপকারভোগীদের তালিকায় দুর্নীতি আছে। ড্যাশবোর্ড তৈরি হলে সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচিগুলোর কার্যক্রম জোরালো নজরদারির মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৩৩ লাখ বয়স্ক ও ২৫ লাখ বিধবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা ভাতা পাওয়ার অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। এতে করে তাদের পেছনে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বয়স্ক ও বিধবাকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব। জানতে চাইলে সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভিত্তি, প্রার্থী ও স্থায়ীত্ব পূর্ণ বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের সক্ষমতা থাকলে এ কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো দরকার। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে গত কয়েক বছরে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমছে। অনেকে দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে, দারিদ্র্য মানুষগুলো অতি দরিদ্র হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে মূল্যস্ফীতির কারণে ৩০ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে।

সূত্রমতে, আসন্ন বাজেটে নতুন করে ৬ লাখ ২৪ হাজার জনকে বিভিন্ন ভাতার অওতায় আনা হচ্ছে। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আসবেন ১০ লাখ ২৬ হাজার জন। ফলে ওই হিসাবে আগামী অর্থবছরে কমছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনী। অর্থ বিভাগের হিসাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৯৯ হাজার জনকে যুক্ত করে আগামী বাজেটে ৬১ লাখ বৃদ্ধকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে। এতে বরাদ্দ থাকছে চার হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা, চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে চার হাজার ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ কর্মসূচিতে ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের মধ্যচরের বাসিন্দা বয়স্ক ভাতাভোগী আব্দুল মান্নান যুগান্তরকে জানান, ৩ মাস অন্তর মোবাইলে এক হাজার ৮শ টাকা ভাতা পাচ্ছি। এ ভাতা দিয়ে সামান্য উপকারে আসে। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে তিনি মনে করেন ভাতার অঙ্ক বাড়ানো হলে সেটি তাদের জীবনমান উন্নয়নে আরও কাজে দেবে।

এদিকে বিধবা ভাতাভোগীতে নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার জন। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বেড়ে ২৯ লাখে উন্নীত হবে। অর্থ বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৮৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে ভাতার অঙ্ক একশ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে।

প্রতিবন্ধী ভাতার কার্যক্রমও বাড়ছে। উপকারভোগী ৩২ লাখ ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ৩৪ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তিন হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে এ খাতে তিন হাজার ৩২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে।

সূত্রমতে, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজে দরিদ্র মাকে ভাতা দেওয়া হয়। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২০ জনকে নতুন করে যুক্ত করা হবে। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ২০০ জন। তাদের ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বেড়ে ৮৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

See More

Latest Photos