অন্তত ৭০ বিলিয়ন ডলার ধ্বংসস্তূপের গাজা: পুনর্গঠনে প্রয়োজন

Total Views : 34
Zoom In Zoom Out Read Later Print

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ যৌথ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইসরাইলের দুই বছরের গণহত্যামূলক যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনে অন্তত ৭০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের এই উপকূলীয় অঞ্চলটি পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করতে কয়েক দশক সময় লেগে যেতে পারে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ডেইলি সাবাহ

সোমবার কার্যকর হওয়া এক নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলের ধারাবাহিক বিমান ও স্থল হামলা বন্ধ হয়েছে—যা ৬৭ হাজার ৮০০-রও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার বিশাল অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

দুই মিলিয়নের বেশি মানুষের এই জনবহুল উপত্যকার ৯০ শতাংশেরও বেশি এখন বাস্তুচ্যুত। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, ঘরবাড়ি ও ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং সর্বত্র তীব্র খাদ্যসংকট বিরাজ করছে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) হিসাবে, গাজার ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ এত বেশি যে তা নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে ছড়িয়ে দিলে প্রায় ১২ মিটার (৪০ ফুট) উঁচু হবে—অথবা মিশরের গিজায় ১৩টি বিশাল পিরামিড তৈরি করা সম্ভব হবে।

এই হিসাবটি করা হয়েছিল চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এই পরিমাণ ছিল ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

‌‘পুরো গাজা জুড়ে ধ্বংস ও ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ টন,’ বলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির বিশেষ প্রতিনিধি জাকো সিলার্স। 

তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের এক সংবাদ সম্মেলনে ভিডিওবার্তায় আরও বলেন, ‘এটি বোঝানোর জন্য আমি বলেছিলাম—এটি সেন্ট্রাল পার্কে ১২ মিটার উঁচু ধ্বংসস্তূপের সমান, অথবা ১৩টি গিজা পিরামিডের সমান।’

তিনি জানান, আগামী তিন বছরের মধ্যে অন্তত ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে, আর বাকি অর্থের প্রয়োজন হবে দীর্ঘমেয়াদে—সম্ভবত কয়েক দশকে।

সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে গাজা সিটিতে, যেখানে জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টার (ইউনোস্যাট)-এর তথ্য অনুযায়ী ৮৩ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত।



ইউএনডিপি জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে গাজা থেকে প্রায় ৮১ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলেছে এবং কাজটি এখনো চলছে।

সিলার্স বলেন, আরব বিশ্ব, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সম্ভাব্য দাতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি।

এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজা পুনর্গঠনের জন্য তিনি উপসাগরীয় দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমর্থন চাইবেন এবং দ্রুত প্রকল্প অর্থায়ন নিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত সম্মেলন থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তার সরকার এখন গাজা পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তার ওপর মনোযোগ দিচ্ছে—এর মধ্যে কনটেইনার ঘর পাঠানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের ‘চুক্তিভঙ্গের পুরোনো অভ্যাস’ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আঙ্কারা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যার আওতায় হামাস শেষ জীবিত ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে এবং ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দিদের ফেরত পাঠিয়েছে।



এরদোগান বলেন, ‘ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লীগের উদ্যোগে গড়ে ওঠা পুনর্গঠন প্রকল্পগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা দ্রুত আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা উপসাগরীয় দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন চাইছি। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াগুলো আশাব্যঞ্জক।’

তুরস্ক ইসরাইলের গাজা অভিযানকে শুরু থেকেই গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করে আসছে এবং এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর সমালোচকদের অন্যতম দেশ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে।

See More

Latest Photos