বগুড়ায় হাড়কাঁপানো শীত রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রিতে; দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ, নেই সরকারি ত্রাণ
হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন
উত্তরের জনপদ বগুড়ায় জেঁকে বসেছে শীত। গত তিন দিন ধরে কুয়াশার চাদর আর কনকনে হিমেল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে এই জনপদের মানুষ। জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিয়েছে। বিশেষ করে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছিন্নমূল এবং দিনমজুরদের দুর্ভোগ এখন চরমে।
তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার তাপমাত্রা ছিল ১১.৭ ডিগ্রি। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরেই শীতের প্রকোপ বাড়ছে এবং আগামী কয়েক দিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা মহাসড়ক
শনিবার ভোর থেকেই পুরো জেলা ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়। দৃষ্টিসীমা কমে আসায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানবাহনগুলোকে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। মৃদু হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছে না।
বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ
তীব্র শীতের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। রিকশাচালক, ভ্যানচালক এবং কৃষিশ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে কুয়াশাভেজা ভোরে বের হলেও কাঙ্ক্ষিত কাজ পাচ্ছেন না। রাস্তায় মানুষের চলাচল কম থাকায় আয় কমে গেছে অটোরিকশা চালকদের। শাকিল নামের এক অটোরিকশা চালক আক্ষেপ করে বলেন, "প্রচণ্ড ঠান্ডায় রিকশা চালানো যাচ্ছে না। যাত্রীও কম, যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।"
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সাহায্যের অভাব
শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, কিছু বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও সীমিত পরিসরে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও সরকারিভাবে এখনো কোনো বড় ধরনের সহযোগিতা বা ত্রাণ কার্যক্রম চোখে পড়েনি। শীতার্তদের রক্ষায় দ্রুত সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।