হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে প্রধান বাধা ভারত: প্রত্যর্পণ নিয়ে কূটনৈতিক অচলাবস্থা

Total Views : 46
Zoom In Zoom Out Read Later Print

সিএনএনের বিশ্লেষণ

এক সময়ের ধর্মনিরপেক্ষ নেত্রী এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতার কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে এক উত্তেজনাপূর্ণ কূটনৈতিক অচলাবস্থার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন। ২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভে সহিংস দমন-পীড়ন চালানোর দায়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্র ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন। ঢাকা তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রত্যর্পণের দাবি জানালেও, এই রায় কার্যকর করার বিষয়টি এখন নির্ভর করছে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের ওপর।

ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা ১৫ বছরের শাসনের পর তিনি গত বছরের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান এবং সেখানে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান মন্তব্য করেন, গণরোষ থেকে বাঁচতে তাঁকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। "তিনি ভারতে লুকিয়ে আছেন আর তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হলো। এটি সত্যিই এক ব্যতিক্রমী গল্প," বলেন তিনি।


 ক্ষমতার উত্থান-পতন ও সহিংস অতীত

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন মর্মান্তিক ঘটনা, নির্বাসন ও ক্ষমতার এক আখ্যান, যা তাঁর নিজ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে এক নৃশংস সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরিবারের সদস্যরা নিহত হন। এই ঘটনার পর তাঁকে ছয় বছর ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছিল। এই সময়টি তাঁর মনে ভারত রাষ্ট্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার বীজ বপন করে।

১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৮ সালে তিনি যখন আবার ক্ষমতায় ফেরেন, তখন তিনি আরও দৃঢ় এক নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হন। পরবর্তী ১৫ বছর তিনি কঠোরতার সঙ্গে দেশ শাসন করেন এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যুগ আনেন। একই সময়ে তিনি ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে নয়াদিল্লিকে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন দেন।

তবে সমালোচকরা অভিযোগ করেন, তাঁর সরকার একদলীয় ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ভারতীয় সংবাদপত্র 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' মন্তব্য করেছে, "চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা ভারতের ওপর কোনো প্রশ্ন ছাড়াই পূর্ণ সমর্থনের জন্য নির্ভর করতে পারতেন।"


 গণ-অভ্যুত্থান ও মৃত্যুদণ্ডের রায়

ক্ষমতার ওপর শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণ আপাতদৃষ্টে অটুট মনে হলেও, গত বছর তরুণদের নেতৃত্বাধীন এক অভ্যুত্থান ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র বিক্ষোভ দ্রুত তাঁর পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার এক নৃশংস দমন-পীড়ন চালায়, যাতে আনুমানিক ১,৪০০ জন মানুষ নিহত হন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, "তাকে পালাতে হয়েছিল। এটা নিজেই অপরাধের একটি স্বীকারোক্তি।"

নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক শরণার্থী হিসেবে থাকা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধাপরাধ আদালত—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল—তাঁর বিচার সম্পন্ন করেছে এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আদালতে হাসিনার বিরুদ্ধে মূলত বিক্ষোভ দমনে বিক্ষোভকারীদের হত্যায় উসকানি, ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। ভুক্তভোগী একজনের বাবা আবদুর রব রয়টার্সকে বলেন, "এই রায় আমাদের মনে কিছুটা হলেও শান্তি এনেছে। কিন্তু তার গলায় জল্লাদের দড়ি দেখলেই আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হব।"


See More

Latest Photos