অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় দ্বিগুণ দাম; ২৫ বছরের চুক্তিতে গচ্চা যাবে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি
আদানির বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে বিপাকে পিডিবি: দুই বছরে লোকসান ১৪ হাজার কোটি টাকা
ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি এখন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য বড় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনার কারণে গত দুই বছরে পিডিবির লোকসান হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল গত বছরেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানিয়েছেন, উদ্ভূত এই সংকটের বিষয়টি ইতোমধ্যে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।
চুক্তির ফাঁদে বিপুল অর্থ অপচয়
২০১৭ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে এই চুক্তি হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ না নিলেও প্রতি মাসে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকারও বেশি 'ক্যাপাসিটি চার্জ' পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত দুই অর্থবছরেই আদানিকে বিল বাবদ দেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ পর্যন্ত মোট পরিশোধিত বিলের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
পিডিবির অন্যান্য উৎসের সঙ্গে দামের তুলনা:
পিডিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় আদানির বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি।
| বিদ্যুতের উৎস | প্রতি ইউনিটের গড় খরচ (টাকা) |
| আদানি গ্রুপ (ভারত) | ১৪.৮৬ টাকা |
| ভারতের অন্যান্য কোম্পানি ও নেপাল | ৮.৭১ টাকা |
| পিডিবির নিজস্ব কেন্দ্র | ৯.২৬ টাকা |
| সরকারি অন্যান্য কেন্দ্র | ৭.১৫ টাকা |
| বেসরকারি আইপিপি (গড়) | ১৪.৫৬ টাকা |
| রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র | ৬.৫২ টাকা |
কয়লার দাম ও আইনি লড়াই
বিদ্যুতের পাশাপাশি কয়লার দাম নিয়েও আদানির সঙ্গে বিরোধ চলছে পিডিবির। আদানি তাদের নিজস্ব খনি থেকে কয়লা সরবরাহ করলেও অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় টনে ৫-৬ ডলার বেশি দাম ধরছে। এই বিরোধ মেটাতে আদানি বর্তমানে সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির মুখে দেশ
২৫ বছরের এই চুক্তি মেয়াদে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবেই আদানিকে দিতে হবে প্রায় ৮.৬২ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। উল্লেখ্য, এই বিশাল অর্থ দিয়ে প্রায় তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। অথচ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে একই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের (যেমন টোরেন্ট পাওয়ার) বিদ্যুতের দাম আদানির তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
বিশেষজ্ঞ মতামত
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, "এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি চরম প্রতিকূল চুক্তি। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। পিডিবির উচিত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে এই ব্যয় কমিয়ে আনা।"
বর্তমানে আদানির কাছে পিডিবির বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ডলার। বকেয়া পরিশোধ না করায় গত নভেম্বরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল কোম্পানিটি।