মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মেরুকরণ: ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব কি ম্লান করে দেবেন ট্রাম্প?

Total Views : 39
Zoom In Zoom Out Read Later Print

সৌদি আরব ও কাতারের কাছে এফ-৩৫ বিক্রির পথে ওয়াশিংটন; দুশ্চিন্তায় তেল আবিব

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের সামরিক সমীকরণ বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ও আরব কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে ইসরায়েলের 'গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব' (কিউএমই) বজায় রাখার দীর্ঘদিনের নীতিটি নতুন করে পর্যালোচনা করছে। মূলত সৌদি আরব ও কাতারের কাছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র বিক্রির পথ প্রশস্ত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দুশ্চিন্তার ভাঁজ ইসরায়েলের কপালে

ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান উদ্বেগের কারণ হলো, আরব দেশগুলোর হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র পৌঁছালে এই অঞ্চলে তাদের একক আধিপত্য বা সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব খর্ব হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমায় ইসরায়েলের যে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে দেশটি।

নেপথ্যে গোপন আলোচনা ও কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এই বিশাল প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করছে ওয়াশিংটন। সূত্রের খবর:

  • মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে একাধিক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।

  • গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইসরায়েল সফর করেছেন তাদের উদ্বেগ প্রশমনের লক্ষ্য নিয়ে।

  • ধারণা করা হচ্ছে, বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যখন ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, তার আগেই এই পরিকল্পনার একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে।

ট্রাম্পের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। গত নভেম্বরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি সৌদি আরবে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির আশ্বাস দেন। ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন যে, ইসরায়েল তাঁকে সৌদি আরবের কাছে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী বা 'লো-ক্যালিবার' অস্ত্র বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে ট্রাম্পের সোজাসাপ্টা কথা, "উভয় দেশই মার্কিন মিত্র এবং দুই দেশেরই সেরা মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।"

কাতারকে নিয়েও অস্বস্তি

শুধুমাত্র সৌদি আরবই নয়, কাতারের কাছেও এফ-৩৫ বিক্রির আলোচনা চালাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই খবর জানাজানি হওয়ার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মহলে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ইসরায়েলের বিশেষ উদ্বেগের কারণ হলো, আরবে উন্নত অস্ত্রের এই জোয়ার তাদের 'অজেয়' থাকার ইমেজকে ম্লান করে দিতে পারে।

আইনের মারপ্যাঁচে ‘সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’

১৯৭৯ সাল থেকে মার্কিন প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তারা এই অঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখবে, যা ২০০৮ সালে মার্কিন আইনেও পরিণত হয়। বর্তমানে ইসরায়েলের কাছে এফ-৩৫-এর বিশেষ সংস্করণ 'আদির' রয়েছে, যা রাডারে ধরা না পড়ে সরাসরি ইরানে হামলা করার সক্ষমতা রাখে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, হবু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাঁকে এই বিশেষ সুবিধা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতি এবং বিশাল অংকের অস্ত্র বিক্রির ব্যবসায়িক স্বার্থ শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের এই একক আধিপত্যকে কতটা টিকিয়ে রাখবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মনে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে।

See More

Latest Photos