মিরপুরে অপরাধের উদ্বেগজনক চিত্র: ৭ মাসে ১৬২০ মামলা, গ্রেপ্তার ৩ হাজার

Total Views : 117
Zoom In Zoom Out Read Later Print

শীর্ষে মাদক ও চুরি; নারী ও শিশু নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডেও উত্তপ্ত সাত থানা এলাকা

জধানীর মিরপুর এলাকায় অপরাধের গ্রাফ ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের দেওয়া গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই সময়ে বিভিন্ন অপরাধে মোট ১ হাজার ৬২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

অপরাধের পরিসংখ্যান ও ধরন

তথ্য অনুযায়ী, মিরপুর বিভাগে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদক। সাত মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সর্বোচ্চ ৫৫০টি মামলা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অপরাধের চিত্র নিম্নরূপ:

অপরাধের ধরনমামলার সংখ্যা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ৫৫০টি
চুরি (সিঁধেল ও অন্যান্য)১৫৫টি
নারী নির্যাতন১০৯টি
শিশু নির্যাতন৫২টি
হত্যাকাণ্ড৫৩টি
জখম সংক্রান্ত৮৬টি
ধর্ষণ৪৭টি
দস্যুতা ও অস্ত্র উদ্ধার৫৪টি

মিরপুর বিভাগের আওতাধীন সাত থানা

ডিএমপির এই বিভাগটি মূলত সাতটি থানা নিয়ে গঠিত: মিরপুর মডেল থানা, পল্লবী, কাফরুল, শাহ আলী, দারুস সালাম, রূপনগর এবং ভাষানটেক থানা। সাত মাসের মাসিক তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৫২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আলোচিত হত্যাকাণ্ড ও দাপট

৫৩টি খুনের মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

  • ব্লেড বাবু হত্যা: ২০ জানুয়ারি পল্লবীর সিরামিক রোডে নিজ গ্রুপের অন্তঃকোন্দলের জেরে নৃশংসভাবে খুন হন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ব্লেড বাবু।

  • পেপার সামি হত্যাকাণ্ড: জুনে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় মাদক নিয়ে বিরোধের জেরে গলা কেটে হত্যা করা হয় রকিবুল হাসান ওরফে পেপার সামিকে।

  • যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা: ১৭ নভেম্বর মিরপুর ১২-তে মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া, যার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

অন্যান্য অপরাধের চালচিত্র

চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া ১৫৫টি মামলার মধ্যে ৪৮টি ছিল সিঁধেল চুরির। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও ছিল উদ্বেগজনক। ৪৭টি ধর্ষণের মামলার পাশাপাশি অ্যাসিড নিক্ষেপের একটি ঘটনাও রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় ২০টি এবং অপহরণের ঘটনায় ১৪টি মামলা হয়েছে। গত জুনে মিরপুর-৬ এলাকায় এক পুলিশ পরিদর্শককে মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একটি চাঞ্চল্যকর মামলা দায়ের করা হয়।

প্রশাসনের বক্তব্য

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মিরপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম আযম জানান, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত টহল এবং মাদকবিরোধী বিশেষ টিম কাজ করছে। দারুস সালাম থানার ওসি এস এম জাকারিয়া বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে তথ্য পাওয়া মাত্রই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডিএমপির মিডিয়া উইংয়ের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি বদ্ধপরিকর।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক এই পরিস্থিতির বিশ্লেষণে বলেন, "পরিসংখ্যান বলছে মিরপুরে অপরাধ বাড়ছে। এর পেছনে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের মনোবল কমে যাওয়া এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব বড় কারণ। এছাড়া পুলিশ যখন নিজেরা আক্রান্ত হয়, তখন তাদের কাজের গতি কমে যায়। হারানো মনোবল ফিরিয়ে এনে আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।"

See More

Latest Photos